দুরুদে তাজ ও এর ফযিলত
কঠিণ বিপদ আপদ থেকে বাঁচার আমল
হঠাত্ যদি কোন বিপদ আসে তাহলে এই আমলটি করলে আল্লাহতায়ালার রহমতে ঐ বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।
আমলটি হলো- দিনে বা রাতে যে কোন সময় (আপনার সুবিধা মতো) অযু করে একা বসে নিরবে এই আমলটি করতে হবে।
প্রথমে- দুরুদে ইব্রাহিম- ১১বার পড়ে নিতে হবে। দুরুদে ইব্রাহিম নিম্নে উল্লেখ করে দেওয়া আছে।
২য়- ইয়া বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ- ১,০০০ (এক হাজার) বার পড়তে হবে।
৩য়- আবার দুরুদে ইব্রাহিম- ১১বার পড়ে নিয়ে মোনাজাত করতে হবে। ( মোনাজাতের মধ্যে নিজের বিপদের কথা আল্লাহ তায়ালাকে মনোযোগ সহকারে এবং বিশ্বাসের সাথে বলতে হবে। যে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। (ইনশাআল্লাহ)
দুরুদে ইব্রহিম: আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলাআলি মুহাম্মাঁদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
ধন সম্পদ বৃদ্ধির আমল
হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের প্রত্যেকটি নামের আলাদা আলাদা মহিমা রহিয়াছে। তারই মধ্যে ধন সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য কয়েকটি নাম রয়েছে। যদি কেহ মনোযোগ সহকারে এবং নিয়ম অনুসারে প্রত্যেকদিন এই নামগুলো পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই নামের বরকতে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিবেন এবং তাহার রিজিক বৃদ্ধি করিয়া দিবেন।
“ আল্লাহ বলে আহ্বান করো কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান করো না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। — সূরা বনী-ইসরাঈল আয়াত-১১০। ”
ছোট ছোট কিছু দোয়া আমল করলে অনেক নেকি হাসিল করা যায় । আমরা এসব দোয়া গুলো একটু সময় দিলেই আমল করতে পারি এবং অনেক নেকি হাসিল করতে পারি। দোয়া চাওয়া বা দোয়া করা মুসলিম সম্প্রদায় এর জন্য খুব জরুরি | একটা বিষয় প্রত্যেক মুসলমানকে আল্লাহর কাছে একান্ত কিছু চাইতে হলে দোয়া করতে হয় তবে এই দোয়া চাওয়ার কিছু নিয়ম আছে প্রত্যেকটি চাওয়ার জন্য থাকে আলাদা দোয়া, আলাদা আমল ,কারণ এক এক দোয়ার এক এক রকম ফজিলত, আমরা অনেকে জানি না কোন সময় কোন দোয়া পড়তে হয় অথবা কোন দোয়া পড়লে কি ফজিলত হয় তাও জানি না।
১। ক) ইয়া বাছিতু =এর অর্থ হলো “প্রশস্তকারী“
এই নামটি প্রতিদিন “ফজর“ নামাজের পর বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে ১০ (দশ) বার “ইয়া বাছিতু“ পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখমন্ডল মাছেহ করতে হবে।
খ) যদি কেহ আল্লাহ তায়ালার এই পবিত্র নামটি ভাত খাওয়ার পর হাত না ধুয়ে ৭০(সত্তর) বার
“ইয়া বাছিতু“ পাঠ করে উপরের দিকে ফুঁ দেয় তাহলে তাহার রিজিক বৃদ্ধি পাইবে।
২। ইয়া বাছিতু, ইয়া মুহাইমিনু= এর অর্থ হলো “প্রশস্তকারী“ ও “পরিপূর্ণরক্ষণা-বেক্ষণকারী“
এই নাম দুইটি একত্রে “প্রত্যেক নামাজের পর“ বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে ৫(পাঁচ)বার করে “ইয়া বাছিতু, ইয়া মুহাইমিনু“ একত্রে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখমন্ডল মাছেহ করতে হবে।
বি:দ্র: আমি নিজে প্রতিদিন নামাজের পর এই আমল দুইটি করে থাকি। যার কারনে আল্লাহ তায়ালার রহমতে কঠিণ বিপদের সময়ও আমি দারিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা পাই। আমি আশা করবো আপনারা সবাই এই আমল দুইটি মনোযোগ সহকারে করবেন।
উল্লেখ্য যে, আপনাদের/আপনারা যে কোন আমল করার সময় আমলের প্রতি মনোযোগ, বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও আস্থা রেখে আমল করলে সেই আমলের বরকত পেতে আল্লাহ তায়ালার রহমতে খুব বেশী সময় লাগে না। (ইনশাআল্লাহ)
সুরা আল আরাফ এর ফযিলত
সূরা আল আরাফ (আরবি ভাষায়: سورة الأعراف, "অর্থ উঁচু স্থান")। এর আয়াত সংখ্যা ২০৬টি। এর রূকুর সংখ্যা ২৪টি। কুরআনের সপ্তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি হলো মাক্কী সুরা। এই সূরার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত।
আল্লাহ প্রেরিত রাসূলের আনুগত্য করার জন্যে শ্রোতাদের উদ্বদ্ধ করাই এর সমগ্র আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। কিন্তু এ দাওয়াত সতর্ক করার ও ভয় দেখানোর ভাবধারাই ফূটে উঠেছে বেশী করে।কারণ এখানে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে (অর্থাৎ মক্কাবাসী) তাদেরকেেএটা বুঝাতেযে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তাদের স্থুল শ্রবণ ও অনুধাবন শক্তি, হঠকারিতা, গোয়ার্তুমী ও একগুঁয়ে মনোভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। যার ফলে রসূলের প্রতি তাদেরকে সম্বোধন করা বন্ধ করে দিয়ে অন্যদেরকে সম্বোধন করার হুকুম অচিরেই নাযিল হতে যাচ্ছিল। তাই বুঝাবার ভংগীতে নবুওয়াত ও রিসালাতের দাওয়াত পেশ করার সাথে সাথে তাদেরকে এ কথাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, নবীর মোকাবিলায় তোমরা যে কর্মনীতি অবলম্বন করেছো তোমাদের আগের বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ও নিজেদের নবীদের সাথে অনুরূপ আচরণ অবলম্বন করে অত্যন্ত মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল।
সুরা আল আন‘ আম (الانعام)
এই সুরাটি কোরআনের ৬ নম্বর সুরা হিসাবে পরিচিত। এর অর্থ হলো “গৃহপালিত পশু“। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ১৬৫।
এ সূরার ১৬ ও ১৭ নম্বর রুকূতে কোন কোন আন’আমের (গৃহপালিত পশু) হারাম এবং কোনটি হালাল সেই সম্পর্কিত আরববাসিদের কাল্পনিক ও কুসংস্কারমূলক ধারণা বিশ্বাসকে খণ্ডন করার জন্য এই সুরা নাযিল হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এ সূরাকে আল আন’আম নামকরণ করা হয়েছে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল:
ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে এ সম্পূর্ণ সূরাটি মক্কায় নাযিল
হয়েছিল। হযরত মূআয ইবনে জাবালের চাচাত বোন হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটনীর পিঠে সওয়ার থাকা
অবস্থায় এ সূরাটি নাযিল হতে থাকে। তখন আমি তাঁর উটনীর লাগাম ধরে ছিলাম।
বোঝার ভারে উটনীর অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে ছিল যেন মনে হচ্ছিল এই বুঝি
তার হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। হাদীসে একথাও সুস্পষ্টভাবে বলা
হয়েছিল যে, যে রাতে এ সূরাটি নাযিল হয় সে রাতেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এটিকে লিপিবদ্ধ করান।
এর বিষয় বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে সুস্পষ্টভাবে মনে হয়, এ সূরাটি মক্কী যুগের শেষের দিকে নাযিল হয়ে থাকবে। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদের রেওয়াতটিও একথার সত্যতা প্রমাণ করে। কারণ তিনি ছিলেন আনসারদের অন্তরভুক্ত। হিজরতের পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যদি ইসলাম গ্রহণ করার আগে তিনি নিছক ভক্তি-শ্রদ্ধার কারণে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবে হয়ে থাকবেন তাঁর মক্কায় অবস্থানের শেষ বছরে। এর আগে ইয়াসরেববাসীদের সাথে তাঁর সম্পর্ক এত বেশী ঘনিষ্ঠ হয়নি যার ফলে তাদের একটি মহিলা তার খেদমতে হাযির হয়ে যেতে পারে।
"সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলো সৃষ্টি করেছেন। তবুও কাফেররা নিজ পালনকর্তার সাথে অন্যান্যকে সমতুল্য স্থির করে।"
সুরা আল-আসর
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
وَالْعَصْرِ103.1
উচ্চারণ- অল্ ‘আছ্রি
অনুবাদ-সময়ের কসম,
إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ103.2
উচ্চারণ- ইন্নাল্ ইন্সা-না লাফী খুস্রিন্
অনুবাদ-নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত।
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ 103.3
উচ্চারণ- ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া ‘আমিলুছ্ ছোয়া -লিহা-তি অতাওয়া- ছোয়াও বিল্ হাককি অ তাওয়া-ছোয়াওবিছ্ ছোয়াব্র্।
অনুবাদ- তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।
তাত্পর্য:
তাফহীমুল কোরআনের ব্যাখ্যা অনুসারে, সময় মানে বিগত সময়-অতীত কালও হতে পারে আবার চলিত সময়ও হতে পারে। এই চলিত বা বর্তমান কাল আসলে কোনো দীর্ঘ সময়ের নাম নয়। বর্তমান কালে প্রতি মুহুর্তে বিগত হচ্ছে এবং অতীতে পরিণত হচ্ছে। আবার ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে প্রতিটি মুহুর্ত বের হয়ে এসে বর্তমানে পরিণত হচ্ছে এবং বর্তমান থেকে আবার তা অতীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে যেহেতু কোনো বিশেষত্ব ছাড়াই শুধু সময়ের কসম খাওয়া হয়েছে, তাই দুই ধরনের সময় বা কাল এর অন্ত্রভূক্ত হয়। অতীতকালের কসম খাওয়ার মানে হচ্ছেঃ মানুষের ইতিহাস এর সাহ্ম দিচ্ছে, যারাই এই গুনাবলী বিবর্জিত ছিল তারাই পরিনামে হ্মতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বর্তমানকালের কসম খাওয়ার অর্থ হল যে, বর্তমানে যে সময়টি অতিবাহিত হচ্ছে সেটি আসলে এমন একটি সময় যা প্রত্যেক ব্যক্তি ও জাতিকে দুনিয়ায় কাজ করার জন্য দেয়া হয়েছে।
সুরা দোহা
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
আরবি উচ্চারণ-বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
وَالضُّحَى93.1
উচ্চারণ- অদ্বদোহা।
অনুবাদ-কসম পূর্বাহ্নের।
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى93.2
উচ্চারণ-অল্লাইলি ইযা- সাজ্বা-।
বাংলা-কসম রাতের যখন তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।
مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى93.3
উচ্চারণ- মা অদ্দা‘আকা রব্বুকা অমা- ক্বলা-।
অনুবাদ- তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি।
وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى93.4
উচ্চারণ ৯৩.৪। অলাল্ আ-খিরাতু খাইরুল্লাকা মিনাল্ ঊলা-।
অনুবাদ- আর অবশ্যই তোমার জন্য পরবর্তী সময় পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে উত্তম।
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى93.5
উচ্চারণ- অলাসাওফা ইয়ু’ত্বীকা রব্বুকা ফার্তাদ্বোয়া-।
অনুবাদ-আর অচিরেই তোমার রব তোমাকে দান করবেন, ফলে তুমি সন্তুষ্ট হবে।
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَى93.6
উচ্চারণ-আলাম্ ইয়াজ্বিদ্কা ইয়াতীমান্ ফাআ-ওয়া-।
অনুবাদ-তিনি কি তোমাকে ইয়াতীম অবস্থায় পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَى93.7
উচ্চারণ-অওয়াজ্বাদাকা দ্বোয়া-ল্লান্ ফাহাদা-।
অনুবাদ-আর তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথ না জানা অবস্থায়। অতঃপর তিনি পথনির্দেশ দিয়েছেন।
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَى93.8
উচ্চারণ-অওয়াজ্বাদাকা ‘আ-য়িলান্ ফাআগ্না-।
বাংলা-তিনি তোমাকে পেয়েছেন নিঃস্ব অতঃপর তিনি সমৃদ্ধ করেছেন।
فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَر93.9
উচ্চারণ-ফাআম্মাল্ ইয়াতীমা ফালা-তাক্বহার।
অনুবাদ-সুতরাং তুমি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হয়ো না।
93.10 وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ
উচ্চারণ-অআম্মাস্ সা-য়িলা ফালা-তার্ন্হা।
অনুবাদ -আর ভিক্ষুককে তুমি ধমক দিওনা।
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ 93.11
উচ্চারণ-অ আম্মা-বিনি’মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিছ্।
অনুবাদ-আর তোমার রবের অনুগ্রহ তুমি বর্ণনা কর।
দুরুদে আকবর এর ২য় খন্ড