Friday, November 6, 2020

সুরা আল-মাউন এর ফযিলত এর আরবি ও বাংলা উচ্চারন অর্থসহ

 

সুরা আল-মাউন এর ফযিলত এর আরবি ও বাংলা উচ্চারন অর্থসহ

          সূরা আল মাউন মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৭ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৭ টি। এ সূরায় কাফের ও মুনাফেকদের কতিপয় দুষ্কর্ম উল্লেখ করে তজ্জন্য জাহান্নামের শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরায় এমন সব নামাযীদেরকে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামায পড়ে।

সূরাঃ আল-মাউন  

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ

أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ

আরাআইতাল্লাযী ইউকাযযি বুবিদ্দীন।

অর্থ- আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে?


فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ

ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু‘‘উল ইয়াতীম।

অর্থ-সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়


وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ

ওয়ালা-ইয়াহুদ্দু‘আলা-ত‘আ-মিল মিছকীন।

অর্থ-এবং মিসকীনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।


فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ

ফাওয়াইঁলুললিল মুসাল্লীন।

অর্থ-অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,


ٱلَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ

আল্লাযীনাহুম ‘আন সালা-তিহিম ছা-হূন।

অর্থ-যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;


ٱلَّذِينَ هُمْ يُرَآءُونَ

আল্লাযীনা হুম ইউরাঊনা।

অর্থ-যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে


وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ

ওয়া ইয়ামনা‘ঊনাল মা‘ঊন।

অর্থ-এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না। 

           বিষয়বস্তু: আখেরাতের প্রতি ঈমান না আনলে মানুষের মধ্যে কোন ধরনের নৈতিকতা জন্ম নেয় তা বর্ণনা করাই এর মূল বিষয়বস্তু। ২ ও ৩ আয়াতে এমনসব কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে আখেরাতকে মিথ্যা বলে। আর শেষ চার আয়াতে যেসব মুনাফিক আপাতদৃষ্টিতে মুসলমান মনে হয় কিন্তু যাদের মনে আখেরাত এবং তার শাস্তি ও পুরস্কার ও পাপ পূর্ণের কোন ধারণা নেই , তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আখেরাত বিশ্বাস ছাড়া মানুষের মধ্যে একটি মজবুত শক্তিশালী ও পবিত্র – পরিচ্ছন্ন চরিত্র গড়ে তোলা কোন ক্রমেই সম্ভবপর নয় , এ সত্যটি মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করে দেয়াই হচ্ছে সামগ্রিকভাবে উভয় ধরনের দলের কার্যধারা বর্ণনা করার মূল উদ্দেশ্য।

      সূরা আল মাউন-এর শানে নুযুল সম্পর্কে বহু মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে যার একটি আরেকটির বিপরীত।
       হযরত মাক্বাতিল ও হযরত কালবি (রহ.)-এর মতে এ সূরা আস ইবনে ওয়ায়িল সাহমী সম্পর্কে এবং হযরত সুদাঈ (রহ.)-এর মতে ওয়ালিদ ইবনে মুগাইরা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
হযরত ইবনে জারিহ (রহ.) বলেনঃ “আবু সুফইয়ান প্রতি সপ্তাহে উট অথবা দুম্বা জবেহ করতো। একদিন এক ইয়াতিম তার কাছে কিছু চাইলে সেই ইয়াতিমকে তার লাঠি দিয়ে আঘাত করলে এ সূরা নাযিল হয়।” (আসবাবুন নুযুল, পৃঃ নং ২৪৭)।
 
       হযরত আত্বা হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করছেন যে, এ সূরা একজন মুনাফিকের ব্যাপারে নাযিল করা হয়েছে। [মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন (ফারসী অনুবাদ), খণ্ড ২৭, পৃঃ নং ৩০৫]।
 
        কিছু কিছু মুফাসসিরগণ মনে করেন, এ সূরার প্রথম অর্ধেক কাফেরদের কারণে এবং শেষ অর্ধেক মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
কিছু মুফাসসিররা বলেছেনঃ “আবু জাহল ক্বিয়ামত অস্বীকার করেছিল। সে যখনি কোন ইয়াতিমকে দেখতো লাঠিপেটা করতো এবং তাদেরকে আহার থেকে বঞ্চিত করতো। আর অন্যদেরকে দান থেকে নিরুৎসাহিত করতো। তখন আল্লাহ তায়ালা আবু জাহলের পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এ সূরা অবতীর্ণ করেন।” (খুলাসাতুল মিনহাজ, খণ্ড ৬, পৃঃ নং ৩৪০; তাফসীর আল ইসনা আশারী, খণ্ড ১৪, পৃঃ নং ৩৫৭)।
 
        উক্ত সুরাটিতে আল্লাহ প্রথমেই বিচার দিবসের কথা বলেছেন এবং এরপর বলছেন সেই সব লোকদের কথা যারা এতিমদের গলা ধাক্কা দেয়। মুলত তারাই বিচার দিবসকে অস্বীকার করে। আমাদের বর্তমান সমাজে এর চিত্র প্রতিদিনের। অন্যায়ভাবে এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করছে। এবং আল্লাহ বলছেন এরা নামযের প্রতি অবহেলা করে এবং অমনোযোগী। এবং এদের নামায আল্লাহ কবুল করেন না। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা লোক দেখানো ইবাদাত করে এবং সাহায্য করে। আর এরাই হচ্ছে মুনাফিক। অর্থাৎ এরা ভিতরে নিজের দাম্ভিকতা দেখানোর জন্যে মানুষদের সাহায্য করছে অথচ বাহিরে এমন ভাব দেখায় তারা সমাজ সেবা করছে। এরাই হলো মুনাফিক। এবং এরাই হবে কাফিদের দলে। মূলত লোক দেখানো  আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না।

No comments:

Post a Comment

দুরুদে আকবর এর ২য় খন্ড

  দুরুদে আকবর এর ২য় খন্ড