Friday, November 6, 2020

সুরা আল-কাফিরুন এর ফযিলত আরবি ও বাংলা উচ্চারন অর্থসহ

 

সুরা আল-কাফিরুন এর ফযিলত আরবি ও বাংলা উচ্চারন অর্থসহ

সূরা আল-কাফিরুন পবিত্র কোরআন শরীফের ১০৯ তম সূরা। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৬টি, রুকু আছে ১টি। 

সূরা আল-কাফিরুন পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সূরা পবিত্র কোরআন শরীফের ৩০ নম্বর পারায় আছে। সূরা আল-কাফিরুনের পূর্ববর্তী সূরা হচ্ছে সূরা আল কাওসার, আর পরবর্তী সূরা হচ্ছে সূরা নাসর।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ তথা তাওহীদের বাণী প্রচার করেন। এই বাণী প্রচারের সময় দাওয়াত দেয়ার সময়কালে মক্কার কুরাইশগণ বিভিন্নভাবে তা প্রচারে বাধা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রচেষ্টা, ছক করেও যখন তারা ব্যর্থ হয়, তখন তারা মহানবী (সা.)-কে একটি প্রস্তান দেয় যা ছিল অনৈতিক। 

তারা নবীজিকে তাওহীদের দাওয়াত ও কুফরীর মধ্যে একটি আপোসের প্রস্তাব দিল। তারা প্রস্তাপ দেয় যে, এক বছর তারা এবং সবাই তাদের মূর্তি পূজা করবে এবং আর এক বছর তারা এবং সবাই আল্লাহর ইবাদত করবে। (নাউজুবিল্লাহ) এই অনৈতিক ও হাস্যকর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে পবিত্র এই সূরা নাজিল করেন এবং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দেন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেন তাদের প্রস্তাব আকিদা ও ধর্ম থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। এ সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মক্কার কিছু মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তারা আল্লাহর একত্ববাদ সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।

ফজিলত: সূরা আল কাফিরুন পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে এ সূরার বেশ কিছু ফাযীলত বর্ণিত হয়েছে। আসুন তা জেনে নেই।


         ১. জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফের দু’ রাকা‘আত সালাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন।” [মুসলিম; ১২১৮]
 

         ২. ঘুমানোর পূর্বে সূরা কাফিরুন পাঠে রাসূল সালাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন। নবীজি বলেন, ‘যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন পাঠ করবে ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন’- শেষ পর্যন্ত তা পাঠ করবে। কেননা উহার মধ্যে শির্ক থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে।’ (তবরাণী শরীফ)


         ৩. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ দু’টি সূরা দিয়ে ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন”। [মুসলিম; ৭২৬]


        ৪. ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ফজরের পূর্বের দু’ রাকা‘আতে এবং মাগরিবের পরের দু’রাকাআতে এ দু’ সূরা পড়তে বিশোর্ধ বার বা দশোর্ধ বার শুনেছি।” [মুসনাদে আহমাদ;২/২৪] অন্য বর্ণনায় এসেছে, “চব্বিশোর্ধ অথবা পঁচিশোর্ধবার শুনেছি”। [মুসনাদে আহমাদ;২/৯৫]


         ৫. ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মাস পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তিনি ফজরের পূর্বের দু’ রাকাআতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ এ দু’সূরা পড়তেন।” [তিরমিয়ী; ৪১৭, ইবনে মাজাহ; ১১৪৯, মুসনাদে আহমাদ; ২/৯৪]


        ৬. তাছাড়া জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, আমাকে নিদ্রার পূর্বে পাঠ করার জন্যে কোন দো‘আ বলে দিন। “তিনি সূরা কাফিরূন পাঠ করতে আদেশ দিলেন এবং বললেন এটা শির্ক থেকে মুক্তিপত্র।” [আবু দাউদ;৫০৫৫, সুনান দারমী;২/৪৫৯, মুস্তাদরাকে হাকিম;২/৫৩৮]


        ৭. অন্য হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূরা ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক চতুর্থাংশ”। [তিরমিয়ী; ২৮৯৩, ২৮৯৫] । অর্থাৎ সূরা আল কাফিরুন চার বার পাঠ করলে একবার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। (সুবহানআল্লাহ )

 

আরবি ও বাংলা উচ্চারন: 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।


قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ
কু'ল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ৷
অর্থ- বলুন, ‘হে কাফিররা!


لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
লাআ বুদু মা তা'আবুদুন ৷
অর্থ-আমি তার ‘ইবাদাত করি না যার ‘ইবাদাত তোমরা কর। 


وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
অলা আনতুম আবিদুনা মা আ'বুদ ৷
অর্থ-এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি। 


وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ
অলা আনা আবিদুম মা আবাত্তুম ৷
অর্থ-এবং আমি ‘ইবাদাতকারী নই তার যার ‘ইবাদাত তোমরা করে আসছ।


وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
অলা আনতুম আবিদুনা মা আ'বুদ ৷
অর্থ-তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি।


لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
লাকুম দিনুকুম অলিয়া দিন ৷
অর্থ-তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।






No comments:

Post a Comment

দুরুদে আকবর এর ২য় খন্ড

  দুরুদে আকবর এর ২য় খন্ড